বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কাজিপুরে চরাঞ্চলে রবি মৌসুমের মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ বেড়েছে আফ্রিদির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন উড়িয়ে দিলেন বাবর নির্বাচনে কে কার আত্মীয় ইসির তা দেখার বিষয় না নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘ইসলামিক মূল্যবোধ লঙ্ঘন’, ২ টিভি চ্যানেল বন্ধ করল তালেবান বিএনপি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় : ওবায়দুল কাদের মুস্তাফিজের বিকল্প ক্রিকেটার নিয়ে নিল চেন্নাই? মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোট করতে মানা কাজিপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র স্বতন্ত্রভাবে বাংলাদেশকে দেখা বন্ধ করেছে কবে, জানালেন আসিফ নজরুল

১০টি বড় উন্নয়ন প্রকল্পে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে নতুন সরকার

রিপোর্টার নাম
  • আপডেট সময় : 11:17 am, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯

padma brijeসিএনআই নিউজ :‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার পাওয়া ১০টি বড় উন্নয়ন প্রকল্পে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে নতুন সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের গতি আশানুরূপ ছিল না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পগুলোকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি সময়মতো অধিগ্রহণ না হওয়া, প্রাকৃতিক বৈরিতা, দরপত্র আহ্বানে ধীরগতি, বিদেশি সহযোগী না পাওয়া, সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গতি ছিল কম।

গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদন বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে ঘুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প লক্ষ্য অনুযায়ী বাস্তবায়ন কাজ এগোয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সমকালকে বলেন, ‘এ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আমি দ্রুত কাজ করা পছন্দ করি। বিশ্বাস করি গতিই জীবন। আমার কাজে এ বিশ্বাসের প্রতিফলন আপনারা দেখতে পাবেন।’

অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত সমকালকে বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন গতিশীল করতে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন জরুরি। যদিও ইতিমধ্যে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আগামীতে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প বাস্তবায়ন জোরদার করবে সরকার। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের জন্য হবে ঐতিহাসিক। কারণ, এ সময়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন।

বিশ্নেষকরাও মনে করেন, এই প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে নতুন সরকার গভীর মনোযোগী হবে। তাহলে উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন নজির স্থাপন করতে সক্ষম হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হবে। নতুন কর্মসংস্থানও বাড়বে দ্রুত হারে।

ভৌত অবকাঠামোকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি বিবেচনায় সরকার দেশের ১০টি বড় প্রকল্পকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে। এসব প্রকল্পকে দেশের অর্থনীতির ‘কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প :প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে আলাদা পুস্তিকাও প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি’ও গঠন করা হয়।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকার দুই লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার ব্যয় অনুমোদন করে। এ বিশাল ব্যয়ের বড় একটি অংশ প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি অর্থায়ন থেকে আসবে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব প্রকল্পের বিপরীতে সরকার ২৯ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, একেকটি প্রকল্পের একেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। তবে সব প্রকল্পে অভিন্ন সমস্যা হলো প্রকল্পের ডিজাইন ও প্ল্যানিংয়ে দেরি হওয়া। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রকল্পে কারিগরি সমস্যা রয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের কাঠামোগত দুর্বলতা থেকেও ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো বের হতে পারেনি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নানামুখী জটিলতার কারণে অগ্রাধিকারের এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে নদীর নিচে মাটির বৈশিষ্ট্য বড় বাধা। আবার দোহাজারী ঘুনদুম রেলপথ স্থাপন দেরি হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে। পাশাপাশি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ব্যস্ত হয়ে পড়ায়ও প্রকল্পটি কিছুটা ধীর হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্প দেরি হয়েছে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার কারণে। এ ছাড়া শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সেবা সংযোগ স্থানান্তর করার কাজও এ প্রকল্পের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবাদীদের বাধার মুখে পড়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেও প্রকল্পগুলো কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা। আশা করা হচ্ছে এসব সমস্যার অনেকটাই কেটে যাবে। নতুন সরকার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অবশ্যই গতি আসবে।

দোহাজারী ঘুনদুম রেলপথ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেলা প্রশাসন যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করেছে তার মধ্যে ২৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত জমির মালিকরা সেখানে প্রকল্পের কাজ করতে দিচ্ছেন না। আবার যে পরিমাণ জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধ হয়েছে সেগুলো এক জায়গায় নয়। আবার কোনো কোনো জায়গায় ১০ জনের মধ্যে আটজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন; কিন্তু ক্ষতিপূরণ না পাওয়া দু’জনের জমি বাকিদের জমির মাঝখানে। ফলে ওই আটজনের জমিতেও কাজ করা যাচ্ছে না। এর মধ্য দিয়েই কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আরও দুটি প্রকল্পের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের প্রকল্পের বড় সমস্যা সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু :দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী প্রকল্প গেল ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার; কিন্তু সম্ভব হয়নি। মূল সেতুর কাজ করতে না পারায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬০ ভাগ। মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি ৭০ ভাগ। নদীশাসন কাজের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ ভাগ। জাজিরা ও মাওয়া সংযোগ সড়কের ১০০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সার্ভিস এরিয়া-২-এর কাজও শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

মেট্রোরেল :রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন সিপি-১ প্রকল্প ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নে সিপি-২ প্রকল্পের ১৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণে নেওয়া হয়েছে সিপি-৩ ও ৪ প্যাকেজ। এ প্যাকেজের ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেষ হয়েছে, আর আর্থিক ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণে নেওয়া হয়েছে সিপি-৫ ও ৬ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে গত ১ আগস্ট। বর্তমানে এ অংশে স্টেশন এরিয়ার চেকবোরিং ও পরিসেবা (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন লাইন) স্থানান্তর শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়নি। তবে এই প্যাকেজের জন্য বরাদ্দের ১৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় শেষ হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে সিপি-৭ প্যাকেজ। গত ১১ জুলাই এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে আন্তঃপ্যাকেজ সমন্বয়ের কাজ চলছে। বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। আর্থিক ব্যয় হয়েছে প্যাকেজের জন্য বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পটির অষ্টম প্যাকেজ হচ্ছে রেলকোচ ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট কেনা। এ অংশে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির জন্য সরকার ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে। নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প :২০১৬ সালের শুরু থেকে প্রকল্পটির কাজ চললেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও রেললাইনের মূল কাজ শুরু হয়নি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার ৫৮২ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলায় এক হাজার ২০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই রেল চালু করতে চান প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন কাজ চালিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ১০৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

দোহাজারী থেকে ঘুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ :নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ১২ শতাংশ কাজ হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম জেলায় সাধারণ মানুষের ৩৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জেলা প্রশাসক এরই মধ্যে ২৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে পেরেছেন। কক্সবাজার জেলায় এক হাজার তিন একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮৯ একর অধিগ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়া দুই জেলায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২০৪ একর এবং সড়ক ও জনপথ, পাউবো, কৃষি উন্নয়ন বিভাগের ২১ একর জমি অধিগ্রহণ করার কাজ শেষ হয়নি। এই জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় ভৌত কাজ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র :ব্যয়ের হিসাবে দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পের পারিপার্শ্বিক অনেক কাজ হলেও মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে প্রকল্পের মূল পর্যায়ের অর্থায়নের জন্য এক হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথম ইউনিটের রি-অ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং এবং টারবাইন বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন ঢালাইয়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলমান। অক্সিলিয়ারি বিল্ডিংয়ের সয়েল স্টাবিলাইজেশনের কাজ শেষ হয়েছে এবং ফাউন্ডেশন ঢালাইয়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলমান। এ ছাড়া ফায়ার ফাইটিং বিল্ডিংয়ের সয়েল স্টাবিলাইজেশনের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের রি-অ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের সয়েল স্টাবিলাইজেশন ও কনক্রিট বিডিংয়ের কাজ চলমান। এ ছাড়া টারবাইন বিল্ডিংয়ের সয়েল স্টাবিলাইজেশনের কাজও চলমান। এক লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র :২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৯ শতাংশ। প্রথম প্যাকেজে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণও শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট থেকে চ্যানেল ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে। উইন্ড মডেলিংয়ের কাজও চলমান। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে গত সাড়ে চার বছরে ছয় হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

এলএনজি টার্মিনাল :প্রকল্পটির বড় অংশ বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তরল প্রাকৃতিক গ্যাসবাহী (এলএনজি) জাহাজ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল শিগগির শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আনোয়ারা-ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট :পরিবেশবাদীদের ব্যাপক বাধার মুখে পড়লেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই মধ্যে সার্বিক প্রকল্পের ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল কাজে অগ্রগতি মাত্র ১৯ ভাগ। ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প থেকে দুই হাজার ৭১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর :প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক ও অফিস নির্মাণ, ড্রেজিং কার্যক্রম ও জলযান সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান। মূল বন্দরের অবকাঠামোকে ১৯টি অঙ্গে ভাগ করে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশন থেকে নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণ, নদীতীরের দায়দায়িত্ব এবং গৃহায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য আলাদা তিনটি অংশ বাস্তবায়নের জন্য চীনা কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। ভারতীয় তৃতীয় এলওসির আওতায় পায়রা বন্দর বহুমুখী টার্মিনাল স্থাপনের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর :২০০৯ সালে এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সম্ভাব্যতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত অর্থায়নের জন্য সহযোগী কোনো দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি। সরকার জি টু জি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী দেশ বা সংস্থা খুঁজছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও চীন এ বন্দর নির্মাণে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই রকম আরো জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2017 Cninews24.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com